মৃত্যুর পর ওর খেরোখাতায় আমরা দেখি বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা কিছু কবিতা, ছোট ছোট পঙ্ক্তি, গল্প ও কিছু নিবন্ধ। নিখোঁজের পরদিনই এ লেভেল প্রথম পর্বের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো। পদার্থবিজ্ঞানে বিশ্বের সর্বোচ্চ নম্বর আর রসায়নে দেশের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল। ও লেভেল পরীক্ষায়ও ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে দেশের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল। যদিও স্কুলের পরীক্ষায় ভালো নম্বরে ত্বকীর তেমন আগ্রহ ছিল না।
ওর উপলব্ধি ছিল, এ ফলে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ মেলে না। ভালো মানুষ হতে গেলে এ ফল তেমন কাজে দেয় না। ও বলত, আমাদের সামনের অনুকরণীয়-অনুসরণীয় যাঁরা, তাঁদের কারোরই তো পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের উদাহরণ নেই। কথা কম বলত, মানুষের
প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা, বিশ্বাস। কেউ দুঃখ পাবে, এমন কথা বা আচরণ ছিল ওর নীতি ও রীতিবিরুদ্ধ। মানুষের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি ছিল খুবই সচেতন। ওর কোনো শত্রু ছিল না। ফল প্রকাশের দিন ত্বকীকে আমরা যখন খুঁজছিলাম, তখন ওর লাশ ভাসছিল শীতলক্ষ্যা নদীতে।
নির্বাক এ শীতলক্ষ্যা অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে আছে। সরকারের আনুকূল্য ছাড়া কখনো কোনো দেশেই অপরাধীরা আইনের বাইরে থাকতে পারে না। পৃথিবীর খুব কম দেশেই অপরাধীরা আইনের ঊর্ধ্বে, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের এ দেশে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অনেক দেশে ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন হয়েছে, প্রতিবাদ হয়েছে সারা দেশে। দেশের শিক্ষাবিদ, শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী অনেকেই বিচার চেয়েছেন, বহুবার বিবৃতি দিয়েছেন, লিখেছেন, কথা বলেছেন, অনেকে কবিতা লিখেছেন, গান গেয়েছেন, প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন, অনেক শিল্পী ছবি এঁকেছেন, শিশুরা এঁকেছে। সেসব নিয়ে কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, সিডি প্রকাশিত হয়েছে।
৮ মার্চ ত্বকীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল শীতলক্ষ্যা নদীতে। হত্যার পর সাড়ে সাত বছর ধরে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসের ৮ তারিখ বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে, কিন্তু বিচার হচ্ছে না। অঘোষিত এক ইনডেমনিটিতে তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।