কে এ এম মোর্শেদ
৮-২৪ জুলাই এই জরিপ করা হয়েছে সিএম-এসএমই (কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম) নারী উদ্যোক্তা এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মজীবী নারীদের পরিস্থিতি বুঝতে। এতে ১ হাজার ৫৮৯ জন রেসপনডেন্ট ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মজীবী নারী এবং বাকি ৫৭৯ জন বিভিন্ন কটেজ, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তা। এর বাইরেও আমরা আরও ৩০ জন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলেছি। ১০টা অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাত আমাদের এই আলোচনায় ছিল। উত্তরদাতাদের গড় বয়স ছিল ৩৫ বছর। তাঁদের ২৬ শতাংশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে। ৮টি বিভাগের ২৮টি জেলায় এ জরিপ করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিউটি পারলার, গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ যেমন ছিল, কর্মীদের মধ্যে টেইলর ও বিউটি পারলারের কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।তাঁদের অন্তত ৫০ শতাংশ বলেছেন যে তাঁদের মূলধনের একটা উৎস হচ্ছে এনজিও। ব্যাংকের ইনভলভমেন্ট ২৩ শতাংশ। যদিও যারা মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ, তাদের ৭০ শতাংশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। স্মল এন্টারপ্রাইজ ৩০ শতাংশ। তবে বড় অংশের মূলধনের একটা অংশ এসেছে ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে। ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তা, ৮০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী বলেছেন, কোভিডের ফলে তাঁদের ক্ষতি হয়েছে। অনলাইন শপ, গার্মেন্টসে ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায়, নির্মাণশ্রমিকেরা সমস্যায় পড়েছেন। সবারই দুই-তৃতীয়াংশ আয় কমেছে।
সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার একটা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এক হাজার কোটি টাকা আলাদা করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল। এ জরিপ যখন শেষ হয়, জুলাইয়ের শেষের দিকে, তখনো নারী ও পুরুষ মিলিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার ১০ শতাংশের মতো বণ্টন করা হয়েছে। প্যাকেজটা কী, কীভাবে পেতে হয়, জিজ্ঞেস করায় দুই-তৃতীয়াংশ বলেছেন, তাঁরা এ প্যাকেজ সম্পর্কে জানেনই না। ৫৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা আসলে চেষ্টাই করেননি। যাঁরা জানেন কিন্তু চেষ্টা করেননি, তাঁরা মনে করছেন, সুদের হার বেশি হবে, ব্যাংক সহযোগিতা করবে না কিংবা তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স নেই। যাঁরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, তাঁদের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল সেফটি কর্মসূচি নিয়েছে, সেখানেও ৫৭ ভাগ কোনো কিছু পাননি। তাঁদের বেশির ভাগই ‘নিউ পুওর’। কোভিডের আগে তাঁরা দরিদ্র ছিলেন না, তাই সামাজিক সুরক্ষা খাতের তালিকায় তাঁদের নাম ছিল না। যেহেতু নাম ছিল না, তাই তাঁরা কোনো খাবার পাননি। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শহরের।
তাঁরা এই পরিস্থিতি কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন? সবচেয়ে প্রচলিত উত্তর হলো, খাবারের ব্যয় কমিয়ে দেওয়া। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৫ শতাংশের খাবারের ব্যয় কমেছে। কর্মজীবীদের ১৪ শতাংশের খাবারের ব্যয় কমেছে। শ্রমজীবীদের একটা বড় অংশ বলেছেন, তাঁরা লোকজনের (আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব) কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছেন । এর বাইরে সঞ্চয় বা আগের সম্পদ বিক্রি করেছেন-এমন সংখ্যা ১৮ শতাংশ। বিভিন্ন ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন ৯ শতাংশ উদ্যোক্তা ও ৩ শতাংশ শ্রমজীবী। ৪১ শতাংশ উদ্যোক্তার কর্মী ছাঁটাই করতে হবে। সুখবর হচ্ছে, ৭৭ ভাগ উদ্যোক্তাই বলছেন, অবস্থা ভালো হলে তাঁরা আগের ব্যবসায় ফিরে যাবেন। ৭৯ ভাগ শ্রমজীবী বলেছেন, তাঁরা আগের কাজেই ফিরে আসবেন। তাঁদের এখনো আশা আছে। একটা ভালো দিক হলো উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবী—সবাই কাজে ফেরার পূর্বশর্ত হিসেবে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন। কী ধরনের সাহায্য তাঁরা চান?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৮৩ শতাংশ শ্রমজীবী ও ৫৬ শতাংশ উদ্যোক্তা নগদ সাহায্য চান। ঋণ চাচ্ছেন উদ্যোক্তাদের ৭৯ শতাংশ। শ্রমজীবীদের ২২ শতাংশ সাহায্য অথবা ব্যাংক কিংবা এনজিও থেকে ঋণ চান।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের কোনো তথ্যভান্ডার নেই। আমাদের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ম্যানুয়ালে নারীর বিশেষ প্রয়োজনের কথা সেভাবে উল্লেখ নেই। নারী উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তথ্যভান্ডার তৈরি করলে তাদের কাছে পৌঁছানো সহজ হতো।