ট্রাম্প যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে হয়তো কট্টর ডানপন্থীদের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান বাতিল কিংবা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠতে পারে। নির্বাচন পেছাতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে এবং সেই অনুমোদন কল্পনা করাও অসম্ভব। দক্ষিণপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো ইতিমধ্যে ডাকযোগে ভোট দেওয়ার বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার শুরু করে দিয়েছে এবং ট্রাম্প হারলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা অস্বীকার করার জন্য জনমত গঠনের কাজও তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
যদি ট্রাম্প একটা বড় সময় ধরে নির্বাচনী প্রচার করতে না পারেন এবং শেষমেশ হেরে যান, তাহলে তিনি নির্বাচনের ফলের স্বচ্ছতা নিয়ে জনগণকে প্রশ্ন তুলতে আহ্বান জানানোর অজুহাত পাবেন।
প্রেসিডেন্টের অসুস্থতা এখন শুধু নির্বাচনী ঝুঁকির বিষয় নয়, এর সঙ্গে জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নও জড়িত। তাঁর দপ্তরের ওপর বিশাল দায়িত্ব ন্যস্ত। প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা না থাকলে সরকারের বহু দপ্তর ‘অটো পাইলট’ কায়দায় কাজ চালাতে শুরু করবে এবং তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
এ ছাড়া আরও ভয় আছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের পক্ষে রুটিন কাজে মন দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সংকটজনক অবস্থা কেটে যাওয়ার পরও রোগীর মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ না–ও করতে পারে। নির্বাচনের ঠিক আগে যেকোনো প্রেসিডেন্টই নিজেকে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ ঘোষণা করতে দ্বিধা করবেন। আর ট্রাম্পের মতো আত্মপ্রেমে মগ্ন একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে তা বলা তো একেবারেই অসম্ভব বিষয়।
তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি মহাক্ষমতাধর দেশের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এমন একজন মানুষের হাতে থাকবে, যিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্থিতিশীল থাকবেন।
তার মানে বোঝা যাচ্ছে সত্যিকারের অক্টোবর সারপ্রাইজ আসতে এখনো বাকি আছে এবং প্রেসিডেন্ট সেই চমককে মোকাবিলা করতে সমর্থ হবেন কি না, সে বিষয়েও আমাদের কোনো ধারণা নেই।
যে প্রেসিডেন্ট অতিমাত্রায় আত্মপ্রেমে মগ্ন এবং মিথ্যাচারে আসক্ত, তিনি প্রতিকূল অবস্থায় পড়লে কী করে বসবেন, তা হয়তো আমরা এমন এক সময়ে টের পাব, যখন আর করার কিছু থাকবে না।
ইতিমধ্যে অনেক বড় বড় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ট্রাম্পের উদাসীনতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি ইতিমধ্যে বহু ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলেছেন। ট্রাম্প জমানায় আমেরিকায় করোনায় যে প্রাণহানি হলো তার জন্যও স্বয়ং ট্রাম্প দায়ী। এ ক্ষতি যাতে আরও বেশি না হয়, সে জন্য আমাদের এ প্রার্থনা করা উচিত, যাতে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং নির্বাচনে কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই হেরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ অবসরে যান। শুধু সেটি ঘটলেই ট্রাম্প সত্যিকার অর্থে সুস্থ হওয়ার সুযোগ পাবেন।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
অ্যান্ড্রু গথোর্প: যুক্তরাষ্ট্রের লেইডেন ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক