রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা চুক্তিকে অবৈধ বলেছে দুদক। এ অবৈধ চুক্তির ওপর ভর করেই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নমুনা বিনা মূল্যে পরীক্ষা করে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ।
এ অভিযোগে গতকাল মো. সাহেদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। কমিশনের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী মামলাটি করেন। অন্য আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল হাসান, উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম।
মামলার নথিতে দেখা যায়, মো. সাহেদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের থাকা-খাওয়ার বিল তুলে নেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাহেদ ও আসামিরা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা একে অপরের যোগসাজশে লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ থাকা রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করে সমঝোতা স্মারক সই করেন। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ কোভিড রোগীর নমুনা বিনা মূল্যে পরীক্ষা করে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগীপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা হিসাবে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন তাঁরা। রিজেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য কর্মকর্তার খাওয়ার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক চাহিদা তুলে ধরে তা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড চিকিৎসার জন্য করা চুক্তিকে দুদক অবৈধ বললেও চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (ডিজি) সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব আসাদুল ইসলাম ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব দিলোওয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধানে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, শুধু তাঁদের আসামি করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে আসামি করার মতো পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাঁদের বিষয়টিও তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।
সাবেক সচিবের নির্দেশেই এ চুক্তি করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে, তারপরও কেন আসামি করা হলো না—এ প্রশ্নের জবাবে দুদকের সচিব বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমরাও বিষয়টি দেখেছি। কারও মৌখিক নির্দেশে আর্থিক সংশ্লেষের মতো কোনো কাজ সম্পন্ন করার আইনি সুযোগ নেই।’
রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স সর্বশেষ কবে নবায়ন করা হয়েছে, জানতে চাইলে দুদক সচিব দিলোওয়ার বখত বলেন, ২০১৪ সালের ৩০ জুনের পর থেকে হাসপাতালটির লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি।