তিনি বিলাতের পার্লামেন্ট বরাবর চিঠি লিখলেন বিধবা বিয়ের অনুমতি দিয়ে আইন পাস করতে। সে আইন পাস হলো। কত বাদ–প্রতিবাদ হলো। তাঁকে মারার জন্য লোক ঘুরত আর তাঁকে পাহারা দেওয়ার জন্য লোক রাখা হলো। তিনি খুঁজে খুঁজে অর্থ সাহায্য দিয়ে বিধবাবিবাহের আয়োজন করতে লাগলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, বিদ্যাসাগরের প্রধান কীর্তি হলো বাংলা ভাষা, ‘বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন।’
বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের বিরোধ ছিল। অবশ্য বঙ্কিমচন্দ্র একাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। বিদ্যাসাগর জবাব দিতেন না।
বিষবৃক্ষ উপন্যাসে সূর্যমুখী চরিত্রটি একটি চিঠিতে লিখছে, ‘ঈশ্বর বিদ্যাসাগর নামে কলিকাতায় কে নাকি বড় পণ্ডিত আছেন, তিনি আবার একখানি বিধবাবিবাহের বহি বাহির করিয়াছেন। যে বিধবার বিবাহের ব্যবস্থা দেয়, সে যদি পণ্ডিত, তবে মূর্খ কে?’
বর্ধমানে এক বাড়িতে ভোজে অতিথিদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রও ছিলেন। রান্না খেয়ে বঙ্কিম উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুরু করলে তাঁর ভাই সঞ্জীবচন্দ্র বললেন, ‘কে রেঁধেছে জানো তো, ঈশ্বরচন্দ্র!’ ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, ‘না হে না, বঙ্কিমের সূর্যমুখী আমার মতো মূর্খ দেখেনি।’ হাসির রোল উঠল।
বিদ্যাসাগরের গদ্যের সমালোচনা করেছেন বঙ্কিম, তাঁকে অনুবাদক হিসেবে তাচ্ছিল্যও করেছেন। তবে শেষ জীবনে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন, ‘বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষা অতি সুমধুর ও মনোহর।’
একদিন এক লোক বিদ্যাসাগরকে বলল, ‘অমুকে আপনার পেছনে খুব লেগেছে। সারাক্ষণ আপনার নিন্দামন্দ করছে।’
বিদ্যাসাগর বললেন, ‘অমুকের তো আমার বিরুদ্ধে লাগার কথা নয়। আমি তো তাঁর কোনো উপকার করেছি বলে মনে করতে পারছি না।’
লাখ কথার এক কথা বলেছেন ঈশ্বরচন্দ্র। আপনি দেখবেন, আপনার বিরুদ্ধে সে-ই সবচেয়ে উচ্চরব, যিনি আপনার কাছ থেকে কোনো উপকার গ্রহণ করেছিলেন।
●আনিসুল হক : প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক