শিশুরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু তাদের ঝুঁকি কম। করোনায় সংক্রমিত হলেও তাদের খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সামান্য সর্দি–কাশি–জ্বর বা দুর্বলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে যায়। কেন এ রকম হয়, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বেশ কিছু গবেষণা রয়েছে। এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমস–এর সায়েন্স টাইমসে অপূর্ভা ম্যান্ডাভিলির (Apoorva Mandavilli, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০) একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা ছাপা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনায় আক্রান্ত হলে শিশুরা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত রোগপ্রতিরোধ শক্তি প্রয়োগ করে ভাইরাসকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়। তাই তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কোনো অপরিচিত প্যাথোজেনের অস্তিত্ব টের পেলেই শিশুদের রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থার একটি শাখা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ভাইরাসকে আক্রমণ করে। শরীরে অচেনা প্যাথোজেনের সন্ধান পাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সে জন্যই করোনাভাইরাস বেশি ক্ষতি করতে পারে না। শিশুদের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা খুব দ্রুত কাজ করে। বয়স্করা এত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে না। সম্প্রতি সায়েন্স ট্রান্সন্যাশনাল মেডিসিন জার্নালে গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়।
শিশুদের আরেকটি সুবিধা রয়েছে। বিবিসি ওয়েবসাইটে (১ এপ্রিল ২০২০) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুদের এই বিশেষ দক্ষতা অর্জনের একটি কারণ হতে পারে তাদের দেহকোষের (সেল) বৈশিষ্ট্য। তাদের শ্বাসতন্ত্রের নিচের দিকে ফুসফুসের কাছাকাছি দেহকোষে এসিই–২ রিসেপ্টর (Angiotensin converting enzyme II, ACE-2) কম থাকে এবং শ্বাসতন্ত্রের ওপরের দিকে তুলনামূলক বেশি থাকে। এসিই–২ রিসেপ্টর ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তখনই সফল হয় যখন তার আঁকশিগুলো দেহকোষের বাইরের আবরণের এসিই–২ রিসেপ্টর পেঁচিয়ে ধরে কোষের ভেতর ঢুকে তার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে।
এরপর ভাইরাস অনায়াসে তার বংশবিস্তার করতে থাকে। কিন্তু সেই রিসেপ্টর না থাকলে ভাইরাস দেহকোষের ভেতরে ঢুকতে না পেরে বিনষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু শিশুদের নাক, মুখ, গলায় এই রিসেপ্টর কিছু থাকে তাই তাদের সংক্রমণ সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের ওপরের দিকেই কিছুটা হয়, কিন্তু ফুসফুস পর্যন্ত যেতে পারে না। কারণ, সেখানে তো এসিই–২ রিসেপ্টর প্রায় থাকেই না।
তারপরও মনে রাখতে হবে যে শিশুদেরও কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই সতর্কতা রাখতে হবে। বরং একটু বেশিই সাবধানতা দরকার। কারণ, শিশুরা চলন–বলনে বেশ দুর্বল। তাদের চোখে চোখে রাখাই ভালো। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।